Source: Jugantor.com; Photo: Basug archive
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এক কোটির অধিক বাংলাদেশী কর্মী। জীবিকার প্রয়োজনে এসব কর্মী দূর প্রবাসে পড়ে রয়েছেন পরিবারে স্বচ্ছলতা আনয়নের জন্য। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে করছে সমৃদ্ধ। দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান ১৩ শতাংশ। অথচ তাদের কল্যাণে কোনো আইন নেই, নেই কোনো কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সরকার প্রবাসী কর্মীদের জন্য গঠন করতে যাচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড। ইংরেজি নতুন বছরেই এই বোর্ড গঠিত হচ্ছে।
জানা যায়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১৩ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের জন্য একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করে। পরে বর্তমান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ২০১৫ সালে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই অতি দ্রুত কল্যাণ বোর্ডের জন্য আইন প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মূলত মন্ত্রীর নির্দেশনার পর মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হককে প্রধান করে আইন প্রণয়নসংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দীর্ঘ কয়েক মাস বৈঠক করে আইনের খসড়া তৈরি করে। বছরের শেষ কর্মদিবস ২৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর, সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত মতামতের ওপর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দফতর, সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে সচিব বেগম শামছুন নাহারের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনটি চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করা হবে।
নতুন বছরে আইনটি সংসদে পাস হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠিত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৫ বছর পর অভিভাবক পাবেন বিদেশে কর্মরত এক কোটি বাংলাদেশী কর্মী ও তাদের পরিবার। এর ফলে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মর্যাদা, অধিকার, কল্যাণ ও জীবনমানের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে নতুন বোর্ড।
বর্তমানে বিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ১৯৯০ সাল থেকে দেশ-বিদেশে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে কাজ করছে। ৩ বছরে এ বোর্ড নানা সীমাবদ্ধতা ও স্বল্প জনবল নিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণে রেকর্ড পরিমাণ কাজ করেছে, যা ২৩ বছরেও সম্ভব হয়নি। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত ও হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদান এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট ছিল।
সরকার ইমিগ্রেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ বাতিল করে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ করা হলেও তাতে প্রবাসী কর্মীর জন্য কিছু বলা হয়নি। এরই মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ, মর্যাদা রক্ষা এবং জীবনমানের উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রবাসী পল্লী (আবাসন), বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত বীমা কোম্পানি, প্রত্যাগত কর্মীদের সামাজিক পুনর্বাসন, ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রবাসে মৃত কর্মীর পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। কিন্তু আইন না থাকা এবং জনবল স্বল্পতার কারণে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এসব কারণে দ্রুত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড গঠনে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। এই আইন প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড একসময় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীনে ছিল। তারপর এ সংস্থাকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হলেও তার আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড হলে সেটি হবে আইনি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে প্রবাসীদের কল্যাণ অনেক বেশি নিশ্চিত হবে। যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের কল্যাণ সাধনের পাশাপাশি যারা ফিরে আসছেন তাদেরও কল্যাণের জন্য বেশি কাজ করা সম্ভব হবে।’
© 2022 BASUG | Website developed by TriConsulting.nl